
শুভ ঘোষ,মুন্সিগঞ্জ:
চলতি মৌসুমে আলু উৎপাদনের শীর্ষ জেলা,মুন্সিগঞ্জে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অনুকুল আবহাওয়া পোঁকা-মাকড়ের সংক্রমন না হওয়া সর্বোপরি বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় এ বছর আলুর ফলন ও গুণগত মান বৃদ্বিতে সহায়ক হয়েছে। জেলার কৃষক,আলু ব্যবসায়ী,হিমাগার মালিক-শ্রমিকরা আলু তোলা,সংরক্ষণে এখন চরম ব্যস্ততায় সময় কাটাচ্ছেন।
বিগত বছর আলুর আশাতীত দাম পাওয়ায় জেলার কৃষকরা আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে,এর ফলে জমির ভাড়া,বীজ আলুর দাম শ্রমিকের মজুরী অস্বাভাবিক হারে বৃদ্বি পায় এছাড়া সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এর ফলে ভালো ফলন পেলেও উৎপাদন খরচ উঠাতে না পারায় লোকসানের চিন্তায় দিশেহারা জেলার কৃষকরা।
এদিকে এ বছর আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়াও বেশী গুণতে হচ্ছে কৃষকদের এতে প্রান্তিক কৃষকরা আলু সংরক্ষন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। নিরুপায় অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী,চলতি রবি মৌসুমে জেলার ৬ উপজেলায় আলু আবাাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ হাজার ৩শত ৫৫ হেক্টর ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৭শত ৫৮ হেক্টর । আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২শত ৫০ মেট্রিক টন ধরা হলেও প্রকৃত উৎপাদন ১২ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।

সরেজমিন সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর এলাকায় গেলে স্থানীয় আলু চাষী এক কৃষক খালেক মিয়া জানান, আলু ব্যবসায়ীরা বর্তমানে ৫৫ কেজি বস্তার ১০০ বস্তা আলু ৯২ হাজার টাকা দর বলছে অথচ ১০০ বস্তা আলু উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১লাখ ১৫ হাজার টাকা।এর ফলে প্রতি কেজি আলুতে ৫ থেকে ৭ টাকা ক্ষতি গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।
তিনি আরও বলেন,এবছর ডায়ামন্ড জাতের বীজ আলুর বাক্স (৫০ কেজি) ব্যবসায়ীরা কৃষকদের জিম্মি করে ৬ হাজার টাকার বাক্স ক্ষেত্র বিশেষে ৩৩ হাজার টাকায় কিনতে বাধ্য করেছে।বীজ আলু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরী করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
একই উপজেলার অপর কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, গত বছর শ্রমিকদের মজুরী ৩ বেলা খাওয়া সহ ৬০০ টাকা দেয়া গেলেও, এ বছর ৭শত টাকা জমি ভাড়া প্রতি শতাংশ ২শত টাকা হলেও এ বছর তা ৮শ টাকা দিতে হয়েছে।
এছাড়া আলু সংরক্ষণে হিমাগারের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। প্রভাবশালী ও বড় মাপের আলু সংরক্ষনকারী,মধ্যস্বত্ব্যভোগীরা হিমাগার অগ্রিম ভাড়া নেয়ায় ৫০ থেকে ১শত বস্তা সংরক্ষণে প্রান্তিক চাষীরা এখন চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রসঙ্গত: জেলার ৬৪ টি হিমাগারের মধ্যে ৫৮ টি সচল রয়েছে। এসব হিমাগারে প্রায় পাঁচ লক্ষ ৪০ হাজার ৭শত ৬০মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণের সুযোগ রয়েছে।

জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তদরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন,এ অঞ্চলে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সার প্রয়োগে উৎপাদন খরচ বাড়ছে, আলুর বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারীভাবে কেনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া বীজ আলু ও খাবার আলু আলাদাভাবে সংরক্ষনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বীজ আলু ব্যবসায়ীদের লাগামহীন দর নিয়ন্ত্রনে পরবর্তি বছর থেকে আমদানীকৃত বীজ আলুর বাক্সে দাম উল্লেখ করে বাজারজাত করার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
এদিকে সদর উপজেলার মুক্তারপুরের কদম রুসুল কোল্ডষ্টোরেজ মালিক দুলাল মন্ডল জানান,আগে যা ভাড়া রাাখতাম তার চেয়ে খরচ অনেকটা বেড়েছে তাই ভাড়া বৃদ্বি করতে হয়েছে। তবে কত টাকা নেয়া হচ্ছে তা বলতে রাজি হননি তিনি।

