
নিজস্ব প্রতিবেদক:
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরকেওয়ারে বিভিন্ন সময় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় বিরোধ চরমে পৌছেঁছে। এতে সুযোগ নিয়েছে হত্যা সহ বিভিন্ন মামলার আওয়ামী লীগের পলাতক আসামীরা।
স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,গোপনে বা প্রকাশ্যে অনেক পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মী সমর্থকরা ইউনিয়নের হোগলাকান্দি ও চরমশুরা সহ বিভিন্ন এলাকায় পুনরায় বিএনপির একটি পক্ষের সাথে ভর করে সুযোগ নিচ্ছে।
জানা যায়, চরকেওয়ার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হত্যা সহ অন্তত ৭টি মামলার আসামী মোতা গাজী ও তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা হোগলাকান্দি এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
গত বছরের ৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ শহরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আফসারউদ্দিন ভুইয়ার নেতৃত্বে চরকেওয়ার থেকে আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা শত শত ককটেল, বোমা ও অস্ত্র নিয়ে শহরে এসে ছাত্র-জনতার ওপর দিনব্যাপী হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে শহরের কৃষিব্যাংক সড়ক।
এসব অভিযুক্তদের গুলিতে ৩ জন নিহত হয়। এছাড়া অন্তত দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে।
পরে ঘটনার দিনের ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্ত হয়েছে,চরকেওয়ার ইউনিয়নের হোগলাকান্দি এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মোতা গাজী তার ছেলে মোস্তফা গাজী,শ্যামল গাজী হিমেল,হ্নদয় গাজী, জাকির মাঝি,জামাল বেপারী,বাবু চৌকিদার, শরীফ মোল্লার মত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের।
এসব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক হত্যা মামলা করা হয়েছে।
এদিকে মামলার হুলিয়া নিয়েই বিএনপির দুইগ্রুপের বিরোধের জেরে এই সন্ত্রাসীদের অনেকেই এখন এলাকায় প্রকাশ্যে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এতে করে বিএনপির একগ্রুপের বাঁধা এবং আরেক গ্রুপের শেল্টারে চরকেওয়ার অশান্ত হয়ে উঠছে। যে কোন সময় চরকেওয়ারে সহিংসতা ও রক্তপাতের মত ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা চরকেওয়ারবাসীর।
গত ১ এপ্রিল ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমুশুরা গ্রামে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ চরমশুরা এলাকায় সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ফকির সমর্থিত লোকজনের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাকিম মিজি সমর্থিত পক্ষের লোকজন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এ ঘটনায় সাইদুর ফকির সমর্থিত অর্ধশতাধিক পরিবার এলাকা ছাড়া রয়েছে বলে জানা গেছে।
আহত জামাল ঢালী বলেন,“হাকিম মিজি সমর্থিত লোকজন আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। প্রায় ৫০ টিরও বেশি পরিবার এখন এলাকা ছাড়া। এলাকায় প্রবেশ করতে পারছি না।
বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি। এদিকে একই দিন পুলিশ দক্ষিণ চরমশুড়া এলাকায় দেশীয় তৈরী একনালা শুটারগান ও একটি লোহার হাতল বিশিষ্ট হাতুড়ি উদ্ধার করে। এসব ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও কর্মী সমর্থকরা এলাকায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ জমানায় হাকিম মিজি আওয়ামী লীগের সাবেক পলাতক এমপি অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এবং চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পলাতক আফসারউদ্দিন ভুইয়ার সহযোগি হয়ে কাজ করে।
আওয়ামী লীগের সাথে সে সময়কার বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) সজিব দে বলেন, চরকেওয়ার এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের কোন পক্ষ মামলা করেনি। এ ঘটনায় পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। অভিযান চলমান রয়েছে। পুলিশি নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরবর্তীতে সার্বিক বিষয়ের উপর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
