মুহাম্মদ আলমগীর ॥ চাঁদপুর শহরের ষোলঘর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যাক্ত কোয়ার্টারে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে জবাই করে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী ও চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাছিম উদ্দিনসহ গোয়েন্দা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গতকাল ২১ জুলাই বিকেলে শিক্ষিকা হত্যার বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনাসূত্রে জানা যায়, ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী (৪৫) তার স্বামী অলোক গোস্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত) হিসাব রক্ষক ছিলেন। তার ২ মেয়ে ১ ছেলে। জয়ন্তী রাণী ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ শাহরাস্তি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯০ সালের ১৬ মে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে খুন হওয়া জয়ন্তী রাণী চক্রবর্তী ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রবিবার দিনের যে কোনো সময় থেকে বিকেলের মধ্যে জয়ন্তীকে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, খুন হওয়া জয়ন্তী চক্রবর্তীকে সকাল থেকে বিকেলের যে কোন সময় দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে তার ঘরে প্রবেশ করে জবাই করে হত্যা করেছে। তবে যারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। জয়ন্তী চক্রবর্তীর হাতে, কানে ও গলায় স্বর্ণালংকার ছিল। খুনিরা এসব কিছুই নেয়নি। তাছাড়া ঘরের আসবাবপত্র ও আলমিরা যেমনটি থাকার কথা, তেমনি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে খুনিরা হত্যার পর কৌশলে এ এলাকাটি ত্যাগ করেছে। চাঁদপুরে পিআইবি হত্যার বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল বাবুল জানান, তিনি প্রাথমিক শিক্ষিকা হিসেবে ১৯৯০ সালর ১৬ মে প্রথম যোগদান করেন। ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে তিনি আমাদের বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছে। তিনি আজকের দিনটি বিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। বিকেলে কয়েকজন শিক্ষার্থী জয়ন্তী চক্রবর্তীর বাসায় প্রাইভেট পড়তে গেলে তার এই রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখতে পেয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা দৌড়ে বাড়িতে চলে যায়। পরে তাদের অভিভাবকদের নিয়ে জয়ন্তী চক্রবর্তীর বাসায় গিয়ে হত্যার বিষয়টি দেখতে পেয়ে আমাদেরকে এসে বিদ্যালয়ে অবগত করে। পরে আমরা শিক্ষকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। জয়ন্তী রাণীর বড় মেয়ে অনন্যা গোস্বামী এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত। ছোট মেয়ে তন্বী গোস্বামী এসএসসি পাশ করার পর চাঁদপুরে ইন্টারমিডিয়েটে অধ্যয়নরত রয়েছে। একমাত্র ছেলে পার্থ সারথী গোস্বামী ঢাকা নটরডেম কলেজে অধ্যয়নরত। অলক গোস্বামীর চাকুরীর সুবাদে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করছিল। স্থানীয়রা জানায়, পান্ িউন্নয়ন বোর্ডে ১৫ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব কর্তব্য পালন করেন। এর মাঝেও দুর্বৃত্তরা কী করে স্টাফ কোয়ার্টারে প্রবেশ করে শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীতে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করল? অলক গোস্বামী ও ছোট মেয়ে তন্বি গোস্বামী গতকাল সকালে ঢাকায় বড় সন্তানদের কাছে গিয়েছেন। এ খুনের ঘটনার সময় পরিবারের কোন সদস্যই বাসায় ছিলেন না। এ লোমহর্ষক ঘটনা জানাজানির পর শ’ শ’ নারী পুরুষ ওই বাসার সামনে ভিড় জমায়। সন্ধ্যার পর চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুরে মডেল থানায় এনে রেখেছেন।

